অন্যান্য দেশ 

Hate Speech : স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা বিদেশের মাটিতে প্রশ্নের মুখে,তথাকথিত দেশভক্ত নুপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল কী সত্যিই রাষ্ট্রবাদী ? বড্ড জানতে ইচ্ছা করে, মোদী-শাহ জবাব দেবেন ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি : স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর আন্তর্জাতিক মহল ভারতকে ক্ষমা চাইতে বলছে এটা শুনতে এবং ভাবতে একজন ভারতবাসী হিসাবে আমরা লজ্জিত । অনুতপ্ত । কিন্ত আজ শুধু আমেরিকা নয় খোদ নরেন্দ্র মোদীকে যারা সম্মানিত করেছিল তারা আজ সরাসরি ভারতকে ক্ষমা চাইতে বলছে । আর নরেন্দ্র মোদী সরকার নীরব কোথায় যেন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না । আসলে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ তৈরি করে ক্ষমতায় থাকার যে কৌশল মোদী-শাহরা নিয়েছেন তাতেই বিপদ বাড়ছে । এখন মহাসংকটে মোদী সরকার । আন্তর্জাতিক মহলে বন্ধু কমছে । প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক তেমন ভাল নেই। এমনকি নেপালের মতো হিন্দু অধ্যুষিত দেশও এখন আর ভারতের প্রতি নরম নয়। বরং তারা চিনের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়েছে বেশি । বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্র হলেও তারা এখন চিনের সঙ্গে সখ্যতা বৃদ্ধি করেছে । পকিস্থান তো আগে থেকেই বিরোধী দেশ হিসাবে পরিচিত । এই অবস্থায় আরব দেশগুলি ছিল ভারতের একমাত্র ভরসাস্থল । সেই ভরসাস্থল এখন হাতছাড়া সমগ্র বিশ্বের সামনে ভারতকে এতটা অসহায় কখনো দেখায় । এটাই হয়তো মোদীজির আচ্ছে দিন ।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এর প্রভাব শুধু মাত্র পশ্চিম এশিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেশগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, আমেরিকা এবং ইউরোপও এ বার বিজেপি শাসনে ভারতের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে আরও বেশি করে আঙুল তোলার সুযোগ পাবে।কূটনৈতিক মহল মনে করছে এমন সময়ে এই কাণ্ডটি ঘটল, যার কিছু দিন আগে থেকেই সামনের পায়ে এসে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তথা সাউথ ব্লক মানবাধিকার সংক্রান্ত পশ্চিমের একের পর রিপোর্টকে মাছির মতো উড়িয়ে দিয়েছেন। সুযোগ পেলেই ঝাঁঝালো ভাবে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তিন দিন আগেই আমেরিকান কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা সংক্রান্ত একটি রিপোর্টকে তীব্র আক্রমণ করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, ‘এ সবের মধ্যে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।’ এ বারে আরব রাষ্ট্রগুলির ক্ষোভের পরে বিদেশমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘আমাদের অতি সপ্রতিভ বিদেশমন্ত্রী তাঁর মুখপাত্রকে দিয়ে ভারতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে আমেরিকার সরকারের রিপোর্টকে নস্যাৎ করেছিলেন। পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার বন্ধুরা এ বার জবাব দিচ্ছে।’’ কুয়েত, কাতার এবং ইরানের পরে সোমবারও একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র ভৎর্সনা করেছে বিজেপি সরকার তথা নরেন্দ্র মোদীকে। তাতে স্বভাবতই যোগ দিয়েছে পাকিস্তান, তালিবান এবং ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন)। অন্য কোনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লি স্বর চড়াতে না পারলেও পাকিস্তান এবং ওআইসি-র বিবৃতির বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। যদিও তাতে সম্মিলিত ক্ষোভ নিরসনের কোনও সম্ভাবনাই তৈরি হয়নি।

Advertisement

ওআইসি-র কথায়, ‘মোদী সরকার ক্রমশ সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বাড়িয়ে চলেছে। ভারতে ইসলামকে কদর্য ভাবে আক্রমণ করছে। ধারাবাহিক এবং সুপরিকল্পিত ভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বুনে দেওয়া হচ্ছে।’ বাগচীর কথায়, “আমরা ভারত নিয়ে ওআইসি-র বিবৃতি দেখেছি। ভারত সরকার সার্বিক ভাবে ওই সঙ্কীর্ণমনা, অযাচিত বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করছে। ভারত সরকার প্রত্যেকটি ধর্মের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। কিছু ব্যক্তিবিশেষ একজন ধর্মীয় ব্যক্তিকে খাটো করে টুইট করে। ওই মতামত কোনও ভাবেই ভারত সরকারের মতামতের প্রতিফলন নয়। ইতিমধ্যেই ওই মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” এর পর মুখপাত্র বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, ওআইসি সচিবালয় এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অনুচিত এবং বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করল। এটা তাদের বিভাজনকামী মানসিকতাকেই তুলে ধরছে। বিশেষ স্বার্থসিদ্ধির জন্য এটা করা হল।’’ এমন পড়ে পাওয়া সুযোগ স্বাভাবিক ভাবেই হাতছাড়া করতে চায়নি পাকিস্তান। দীর্ঘদিন পরে এমন একটি ঘটনা ঘটল, যেখানে সমস্ত মুসলিম দেশ ভারতের বিরুদ্ধে একসুর। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ঘটনার নিন্দা করার পরে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের ‘চার্জ দা’ফেয়ার্স’-কে ডেকে পাঠায় পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক। বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সরকার ভারতের শাসক দল বিজেপির দুই পদস্থ কর্তার পয়গম্বর সংক্রান্ত জঘন্য মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছে। ভারতীয় দূতকে বলা হয়েছে, এই ঘটনা শুধু পাকিস্তানকেই নয়, গোটা বিশ্বের মুসলমান মনকে আহত করেছে।’

পাকিস্তানের এই মন্তব্যের জবাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র পাল্টা বলেছেন, “যে দেশের সরকার ধারাবাহিক ভাবে তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ভঙ্গ করে, তারা আজ জ্ঞান দিচ্ছে অন্য একটি দেশকে সেই একই বিষয় নিয়ে! ব্যাপারটি এতটাই বিস্ময়ের যে কারও তা নজর এড়াবে না। হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টানদের উপর যে নিপীড়ন পাকিস্তান করে চলেছে, গোটা বিশ্ব তার সাক্ষী। আমরা পাকিস্তানকে তাদের নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের দিকে নজর দিতে অনুরোধ করছি। ভারতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তারা যেন তৈরি না করে।”

বিজেপি এবং মোদী সরকার যতই দাবি করুক না কেন তারা সব সম্প্রদায়কে এবং সব ধর্মকে সম্মান জানায়, কারও প্রতি বিদ্বেষ দেখায় না । কিন্ত বিগত ৮ বছর ধরে এই দেশে যা চলছে তাকে কী দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন মোদী শাহরা । জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে যেভাবে ভারতে সব মসজিদকে নিশানা বানানো হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া যে আন্তর্জাতিক মহলে হবে তা জানা ছিল না মোদী-শাহদের । দেশের সম্মান, দেশের আত্মসম্মান, দেশের মূল্যবোধকে, দেশের বিবিধের মাঝে মিলনের মহান বার্তাকে ম্লান করে দেওয়ার কোনো অধিকার বিজেপি বা মোদী সরকারের নেই । একজন দেশভক্তের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের সম্মানকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরা , কিন্ত তথাকথিত দেশভক্ত নুপুর শর্মা ও নবীন জিন্দাল কী সত্যি রাষ্ট্রবাদী ? বড্ড জানতে ইচ্ছা করে মোদী-শাহ জবাব দেবেন ?


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ